নির্বাচিত পোস্টসমূহ
Home » ইসলামী আকিদা » আল কুর’আনের আলোকে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নাবী (সা)

আল কুর’আনের আলোকে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নাবী (সা)

মিলাদুন্নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল কুর’আনের আলোকে

পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বিরোধীতাকারী ওহাবী-খারেজী সম্প্রদায়ের নেতাদের দাবী হচ্ছে এটি কুর’আন-হাদীসে নেই, সালফে-সালেহীনদের কেউই তা পালন করেন নি। তাই তা পালন করা হারাম, শিরক ও বিদ’আত।

মিলাদুন্নাবী (সাঃ) পালন ইসলামি শারীয়াতের মধ্যেই পড়ে। আমরা এখানে বেশ কয়েকটি লিখনির মাধ্যমে তা কুর’আন, সহীহ হাদীস ও খ্যাতিমান/স্ববানামধন্য আলেমগণের মন্তব্যের দ্বারা তা প্রমাণ করব। সবগুলো লিখনি পড়লেই যে কেউই সকল প্রশ্নের জবাব পেয়ে যাবেন।

আমরা মহাগ্রন্থ আল কুর’আনের আলোকে প্রমাণ করব এই দিবস পালনের যৌক্তিকতা।

এ পৃথিবীতে যত নেয়ামত রয়েছে বা এসেছে এর মধ্যে সবচেয়ে বড় নেয়ামত হচ্ছে রাসুলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম। আল্লাহর এ নেয়ামত ও আনুগ্রহকে কেন্দ্র করে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মীলাদ বা জন্ম তথা দুনিয়ায় শুভাগমনের কথা আলোচনা করেছেন স্বয়ং রাব্বুল আলামীন নিজে। এর পাশাপাশি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা ও আনন্দ করার নির্দিশও তিনি নিজে দিয়েছেন। যেমনঃ

১. নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট তোমাদের থেকে এমন একজন রাসূল এসেছেন যাঁর নিকট তোমাদের দুঃখ-কষ্ট দুঃসহ। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী এবং মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল ও দয়াময়। [সূরা তাওবা ১১৮]

২. হযরত ইব্রাহীম (আঃ) মহান আল্লাহ তা’আলা এর দরবারে ফারিয়াদ জানান, ওহে প্রভু তাঁদের মধে তাঁদের হতে এমন একজন রাসূল প্রেরণ করুন, যিনি আপনার বাণীসমূহ তাঁদেরকে পাঠ করে শুনাবেন এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দিয়ে পবিত্র করবেন। নিশ্চয়ই আপনিও অতিশয় পরাক্রমশালী ও মহাজ্ঞানী। [সূরা বাকারা ১২৯]

এখানে দেখা যায় হযরত ইব্রাহীম (আঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর আবির্ভাবের ৪ হাজার বছর পূর্বেই মুনাজাত আকারে তাঁর আবির্ভাব, তাঁর সারা জীবনের কর্ম চাঞ্চল্য ও মানুষের আত্মার পরিশুদ্ধির ক্ষমতার বর্ণনা হুজুর (দঃ) এর মিলাদের সারাংশ পাঠ করেছেন এবং এই মুনাজাত বা মিলাদ দন্ডায়মান অবস্থায়ই করেছেন। ইবন তায়্যিমিয়ার ছাত্র ইমাম ইবন কাসীর (রঃ) তাঁর বিখ্যাত ইতিহাস গ্রন্থ ‘আল-বিদায়্যা ওয়ান নিহায়্যা’ তে লিখেছেন
“উক্ত দোয়া করার সময় ইব্রাহীম (আঃ) দন্ডায়মান অবস্থায় ছিলেন”। [আল-বিদায়্যা ওয়ান নিহায়্যা, ২য় খন্ড, পৃ ২৬১] এখান থেকে খুব সহজেই বুঝা যায়, বর্তমানে মিলাদ শারীফে রাসূল পাকের আগমনের যে বর্ণনা দেয়া হয় তা ইব্রাহীম (আঃ) এর দোয়ার সামান্য অংশ মাত্র। সুতরাং আমাদের মিলাদ শারীফ পাঠ ও কিয়াম করা প্রকৃতপক্ষে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর সুন্নাতি তরিকা।

৩. যখন ঈসা (আঃ) বনী ইসরাইলকে বললেন, আমি আল্লাহ এর রাসূল হিসেবে তোমাদের কাছে প্রেরিত হয়েছি। তার সঙ্গে আমার সাথে যে তাওরাত এসেছে তার প্রতি আমার সমর্থন রয়েছে এবং আমার পর যে রাসূল আসবেন তার নাম হবে আহমদ। ঐ রাসূলের সুসংবা নিয়ে তোমাদের নিকট প্রেরিত হয়েছি। আর যখন সে রাসূল তাদের নিকট দলীলসমূহ সহকারে আসলেন, তখন তারা বলতে লাগল এটা প্রকাশ্য যাদু। [সূরা ছফ ৬]

হযরত ঈসা (আঃ) এর ভাষণ দন্ডায়মান অবস্থায় হত। আর এটাই ভাষণের সাধারণ রীতিও বটে। ইমাম ইবন কাসীর (রঃ) তাঁর বিখ্যাত ইতিহাস গ্রন্থ ‘আল-বিদায়্যা ওয়ান নিহায়্যা’ তে উল্লেখ করেন
“ঈসা (আঃ) দন্ডায়মান অবস্থায় (কিয়াম) অবস্থায় তাঁর উম্মাতহাওয়ারীদেরকে নবীজীর আগমনের সুসংবাদ দিয়ে বক্তৃতা করেছিলেন”। [আল-বিদায়্যা ওয়ান নিহায়্যা, ২য় খন্ড, পৃ ২৬১] সুতরাং মিলাদ ও কিয়াম হযরত ঈসা (আঃ) এর সুন্নাত এবং তা নবী যুগের ৫৭০ বছর পূর্ব হতেই।

৪. নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে মহান ‘নূর’ [মহানবী (সাঃ)] এবং ষ্পষ্ট কিতাব (আল কুর’আন) এসেছে। [সূরা মায়িদা ১৫]

৫. আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সমস্ত নবী তথা হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে হযরত ঈসা (আঃ) পর্যন্ত যত নবী দুনিয়ায় আগমণ করেছেন, তাদের সবাইকে নিয়ে একটি মজলিস বা সভা করেছেন। এই মজলিসে এক লক্ষ চব্বিশ হাজার মতান্তরে দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার পয়গম্বর (আঃ) উপস্থিত ছিলেন। শুধুমাত্র তাঁর হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন (সাঃ) এর বিলাদাত, শান ও মান অন্যান্য নবীগণের সামনে তুলে ধরে মীলাদ বা দুনিয়ায় আগমনের বাণী শোনানো রাসূল (সাঃ) এর প্রতি সকল নবী (আঃ) এর পক্ষ থেকে ঈমান গ্রহণের পক্ষ নিয়ার জন্য। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সেই ঘটনাকে উদ্দেশ্য করে বলেন –

“স্মরণ করুন যখন আল্লাহ নবীগণের নিকট থেকে এমর্মে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন, আমি তোমাদেরকে যে কিতাব ও হিকমত প্রদান করব। তারপর তোমাদের নিকট তাশরীফ আনবেন রাসূল (সাঃ)। যিনি তোমাদের কিতাবগুলো সত্যায়ন করবেন। তখন তোমরা নিশ্চয়ই তাঁর উপর ঈমান আনবে এবং নিশ্ছয়ই তাঁকে সাহায্য করবে। আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করলেন, তোমরা কি স্বীকার করলে এবং এ সম্পর্কে আমার গুরু দায়িত্ব গ্রহণ করলে? সবাই আরজ করল, আমরা স্বীকার করলাম। আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করলেন, তোমরা একে অপরের উপরের সাক্ষী হয়ে যাও। আমি নিজেও তোমাদের সাক্ষীদের মধ্যে রইলাম। সুতরাং যে কেউ এরপর ফিরে যাবে, তবে সে লোক ফাসিক”। [সূরা আল ইমরান ৮১, ৮২]

উপরে উল্লিখিত আয়াতসমূহের মাধ্যমে মিলাদুন্নাবী বা রাসূল (সাঃ) এর দুনিয়ায় শুভাগমনের কথা তথা মিলাদের আলোচনা করা হয়েছে। বস্তুত নবীজীর সম্মানে এটাই ছিল সর্ব প্রথম মিলাদ মাহফিল এবং এর উদ্যোক্তা ছিলেন স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নিজে। সমস্ত নবীগণ খোদার দরবারে দন্ডায়মান থেকে মিলাদ শুনেছিলেন এবং কিয়াম করেছিলেন। কেননা খোদার দরবারে বসার কোনো অবকাশ নেই। পরিবেশটি ছিল খুবই আদবের। মিলাদ পাঠকারী ছিলেন স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা এবং কিয়ামকারীগণ ছিলেন আম্বিয়ায়ে কিরাম। ওহাবী-খারেজী সম্প্রদায়ের লোকেরা ফতওয়া দেয় মিলাদুন্নাবী (সাঃ) পালন করা ‘শিরক’-‘বিদ’আত’-‘বিধর্মীদের নীতি’ ইত্যাদি ইত্যাদি। খুব জানতে ইচ্ছা করে এদের মত ফতওয়াবাজেরা এই ক্ষেত্রে কি ফতওয়া দিবে! ! !

Did you like this? Share it:

About কিতাবুল ইলম

রাসুল সাঃ বলছেন, "প্রচার কর, যদিও তা একটি মাত্র আয়াত হয়" সেই প্রচারের লক্ষে আমরা। 'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক' প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

Leave a Reply