নির্বাচিত পোস্টসমূহ
Home » ইবাদত » পবিত্র শবে-ই-মিরাজের তাৎপর্য

পবিত্র শবে-ই-মিরাজের তাৎপর্য

মিরাজ সংঘটিত হয়েছিল মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর নবুওয়াত প্রাপ্তির পর তাঁর মক্কা জীবনের শেষ দিকে। তিনি জেগে থাকা অবস্থায় সশরীরে ‘বোরাক’ নামের বাহনে মক্কা মুকাররমা থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস গিয়েছিলেন এবং সেখানে সব নবী-রাসূলের ইমাম হয়ে নামাজ আদায় করে সশরীরে ঊর্ধ্বলোকে গমন করেন। আল কুরআনের পাশাপাশি বহুসংখ্যক বিশুদ্ধ হাদিসেও মিরাজের ঘটনা বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে।

মিরাজ শব্দের অর্থ হলো ঊর্ধ্বালোকে আরোহণ বা পরিভ্রমণ করা। মিরাজের আসলে দু’টি অংশ রয়েছে: এক. ইসরা ও দুই. মিরাজ। ইসরা অর্থ নৈশভ্রমণ। মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত ভ্রমণকে ইসরা বলা হয়। আল কুরআনে আল্লাহ বলেছেন : “মহিমান্বিত আল্লাহ্‌ , যিনি তাঁর বান্দাকে (মোহাম্মাদ (সাঃ)) রজনীতে ভ্রমণ করিয়েছিলেন, পবিত্র মসজিদ মসজিদুল হারাম থেকে দূরবর্তী মসজিদ মসজিদুল আকসা পর্যন্ত । যার সীমানাকে আমি করেছিলাম আমার আর্শীবাদ ধন্য, যেনো আমি তাঁকে আমার কিছু নিদর্শন দেখাতে পারি। তিনিই একমাত্র যিনি সব শোনেন এবং দেখেন।”(সূরা বনী ইসলাইল : ১)। আর মিরাজ এর অর্থ ওপরে উঠার সিঁড়ি বা সোপান। মসজিদুল আকসা থেকে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত ভ্রমণকে মিরাজ বলা হয়। কুরআনে আল্লাহপাক আরো বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই তিনি (মোহাম্মদ (সাঃ)) তাকে (জিবরাইল (আঃ)) কে আরেকবার দেখেছিলেন সিদরাতুল মুনতাহার কাছে। যার কাছে অবস্খিত জান্নাত। যখন বৃক্ষটি দ্বারা আচ্ছন্ন হওয়ার তদ্বারা আচ্ছন্ন ছিল। তার দৃষ্টিবিভ্রম হয়নি এবং সীমালঙ্ঘনও হয়নি। নিশ্চয়ই তিনি তাঁর পালনকর্তার মহান নিদর্শনাবলি অবলোকন করেছেন।’ (সূরা আননাজম : ১৩-১৮)

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ)এর জীবনে ‘মিরাজ’ এমন সময় সংঘটিত হয়েছিল যে সময়টি ছিল তাঁর জীবনের সবচেয়ে দুর্যোগময় মুহূর্ত। কুরাইশদের দ্বারা মহানবী (সাঃ) এবং তাঁর অনুসারীদের সামাজিকভাবে বয়কট, প্রিয় স্ত্রী হজরত খাদিজা (রাঃ) ও একমাত্র অভিভাবক চাচা আবু তালিবের ইন্তেকাল, তায়েফবাসীর লাঞ্ছনা প্রিয় মহানবীকে মানসিকভাবে মর্মাহত করে । আর এমনই সময়ে মহান আল্লাহর কাছ থেকে আমন্ত্রণ এলো মিরাজের। মিরাজের রাতে মহান আল্লাহতায়ালা তার প্রিয় বন্ধুকে একান্ত সান্নিধ্যে নিয়ে আসেন। আল্লাহ রাসূল (সাঃ)কে ইসলামের বাস্তবায়ন রূপরেখা, ভবিষ্যতের কর্মপন্থা এবং মুমিনদের জন্য সর্বোত্তম ইবাদত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নিয়ামতস্বরূপ দান করেন। সে জন্য বলা হয়েছে, ‘আস্সালাতু মিরাজুল মুমিনিন’ নামাজ মুমিনদের জন্য মিরাজস্বরূপ। ইসলামের প্রত্যেকটি ইবাদতের বিধান আল্লাহতায়ালা হজরত জিবরাঈল (আঃ) এর মাধ্যমে মহানবী (সাঃ)এর কাছে প্রেরণ করেন। কিন্তু নামাজই একমাত্র ইবাদত যা কোনো মাধ্যম ছাড়াই আল্লাহতায়ালা সরাসরি মহানবী (সাঃ)এর ওপর ফরজ করেছেন।

কুরআন ও সহীহ হাদিসের অকাট্য তথ্য একজন মুসলমান মানতে বাধ্য। একজন খাঁটি মুসলমানের বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে মিরাজের সত্যতা প্রমানের অপেক্ষা না করে এ বিষয়ে মনেপ্রাণে বিশ্বাস স্খাপন করার নামই ঈমান। তাই রসূলুল্লাহ (সাঃ) এর মিরাজ গমনের কথা একজন অবিশ্বাসীর মুখে শুনে হযরত আবু বকর (রাঃ) তৎক্ষণাৎ বিশ্বাস করেছিলেন বলেই রাসূল (সাঃ) তাঁকে ‘সিদ্দিক’ উপাধি দিয়েছিলেন। মিরাজের মাধ্যমে মহানবী (সাঃ) কে আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা দান করা হয়, যেনো মানুষ আল্লাহর নিদর্শন উপলব্ধি করতে পারে এবং স্বচ্ছ ধারণা অর্জন করতে পারে।

পরিশেষে, প্রিয়নবী (সাঃ) এর স্বচক্ষে দেখা মিরাজের ঘটনাবলি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে ইসলামের পথে চলাই হোক একজন মুসলমান হিসাবে আমাদের অঙ্গীকার।

Did you like this? Share it:

About কিতাবুল ইলম

রাসুল সাঃ বলছেন, "প্রচার কর, যদিও তা একটি মাত্র আয়াত হয়" সেই প্রচারের লক্ষে আমরা। 'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক' প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

Leave a Reply