যাদের আক্বিদা দুর্বল তারাই একদিন এক কথা, আরেকদিন আরেক কথা বলে। মি. মওদুদীকে নিয়ে কথা বললে আজ বলে ভালো, তো কাল বলে সে খারাপ। তাই বললাম যাদের আক্বিদা দুর্বল তারাই এমন মুনাফিকি আচরণ করে।
মি. মওদুদী বলেছেন, “সাহাবীরা সত্যের মাপকাঠি নন”।
সাহাবীরা সত্যের মাপকাঠি ছিলেন কি না তা বুঝতে হলে আমাদের পবিত্র কুরআন সংরক্ষণের ইতিহাস জানা প্রয়োজন। নিচে সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:
পবিত্র কুরআন ওহীর মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ (সা) এর কাছে আসত আর রাসুলুল্লাহ (সা) তা সাহাবীদের পরে শুনাতেন। রাসূল (সাঃ) একজন সাহাবীকে কুরআন লিপিবদ্ধ করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন যায়িদ ইবন সাবিত (রাঃ)। যায়িদ (রাঃ) পাথর, চামড়া ইত্যাদিতে ওহী নাজিল হওয়ার সাথে সাথে তা লিখে ফেলতেন এবং রাসূলে পাক (সাঃ) কে তা আবার পড়ে শোনাতেন যাতে কোন ভুল হলে তা শুধরে নেওয়া যায়। এটিই ছিল কুরআন লিপিবদ্ধ করার প্রথম ধাপ। অনেক সাহাবী নিজস্ব উদ্যোগে নিজের ব্যক্তিগত রেকর্ডের জন্য কুরআন এর বিভিন্ন আয়াত সমূহ লিপিবদ্ধ করতেন। এভাবে কুরআনের আয়াত সমূহ বিক্ষিপ্তভাবে লিপিবদ্ধ ছিল। তবে সাহাবীদের একটি বিরাট অংশেরই কুরআন মুখস্থ ছিল।
হযরত আবু বকর (রাঃ) এর খিলাফতের সময় ইয়ামামার যুদ্ধে বেশ কিছু হাফিজ শহীদ হয়ে যান। তখন হযরত ওমর (রাঃ) খালিফা হযরত আবু বকর (রাঃ) এর কাছে আসেন এবং কুরআন কে একত্রিত করে লিপিবদ্ধ করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন তা না করলে ভবিষ্যতে কু্রআন সংরক্ষণ করা কঠিন হয়ে পড়বে। খালিফা হযরত আবু বকর (রাঃ) তাতে সম্মত হন। তিনি যায়িদ বিন সাবিত (রাঃ), যাকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিজে কুরআনের আয়াত সমূহ লিপিবদ্ধ করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন তাকে দায়িত্ব দেন কুরআনকে একত্র করার। সাহাবীদের প্রজ্ঞা, সততা ও ইসলামের প্রতি নিষ্ঠার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তিনি স্থাপন করেন এই কুরআন সংগ্রহ ও একত্রিত করার কাজ করতে গিয়ে। তারপর পর্যায়ক্রমে হজরত ওমর (রাঃ), হজরত উসমান (রাঃ) ব্যাপকভাবে প্রচার ও প্রসার করেন।
যদি প্রশ্ন করি আমরা কুরআন কার মাধ্যমে পেয়েছি তাহলে বেশিরভাগ উত্তর হবে বিশ্বনবী (সা) এর মাধ্যমে। হা, অবশ্যই এই উত্তরটি মহা সত্য। তবে একটু যদি চিন্তা ভাবনা করে উত্তর দেই তাহলে আরো সুন্দর একটি উত্তর দেয়া সম্ভব আর তা হবে রাসুলুল্লাহ (সা) এর মাধ্যমে পবিত্র কুরআন দুনিয়ায় এসেছে আর সাহাবায়ে কেরামগনের মাধ্যমে পবিত্র কুরআন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে গেছে। আর সাহাবায়ে কেরামগন যেই কুরআন সংরক্ষণ করেছিলেন ঠিক সেই কুরআনই আমাদের কাছে এসেছে।
এখন কেউ যদি বলে, সাহাবীরা সত্যের মাপকাঠি নন তাহলে তো পবিত্র ইসলাম ধর্মের মহাসত্য মহাগ্রন্থ আল- কুরআনই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে যাবে। কারণ এই কুরআন সাহাবায়ে কেরামগনই রক্ষনাবেক্ষণ করেছেন। তারা যদি সঠিক না হন তাহলে কুরআনের সঠিকতা কতটুকু?
জনাব মওদুদী বলেছেন, “সাহাবীরা সত্যের মাপকাঠি নন”, যদি এই কথার উপর কারো বিশ্বাস চলে আসে তাহলে পবিত্র কুরআন নিয়ে তার মধ্যে সন্দেহ চলে আসবে। আর কুরআন নিয়ে মনের মধ্যে সামান্যতম সন্দেহ চলে আসা মানে ঈমানহারা হয়ে চির জাহান্নামী হয়ে যাওয়া। কেননা মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে সুরা বাক্বারার ২ নাম্বার আয়াতে বলেন, “এটি (আল্লাহর) কিতাব (পবিত্র কুরআন), এতে কোনো সন্দেহ নেই।
সুতরাং যারা সাহাবীদের সত্যের মাপকাঠি মনে করে না তারা প্রকৃতপক্ষে ইসলামকেই মানে না।
মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের মওদুদী ফিতনা সহ সকল বাতিল ফেরকার ফিতনা থেকে সবাইকে হিফাযত করুন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবায়ে কেরাম রাদ্বিয়াল্লাহু তা’লা আনহুমগনের দেখানো সরল এবং সঠিক পথে চলার তৌফিক দিন- আমীন।
সংকলন- রাকিবুর রহমান খান