নির্বাচিত পোস্টসমূহ
Home » আল- কোরআন » কুরআন ও হাদিসের আলোকে বিবাহ

কুরআন ও হাদিসের আলোকে বিবাহ

ইসলামে বিবাহ-শাদী অনেক  সহজ আর প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থা বা সামাজিকতা বিবাহ-শাদীকে আজ কঠিন করে ফেলেছে যার ফলে বিয়ে করতে বিলম্ব হওয়ায় যুবসমাজ নানা প্রকার সামাজিক অন্যায় ও ব্যভিচারে লিপ্ত।

আজকাল দেখা যায়, বিয়ের দেনমোহর ধার্য করতে গিয়ে বর ও কনে পক্ষের মধ্যে দর কষাকষি শুরু হয় এমনকি বিয়ে পর্যন্ত ভেঙ্গে যায়। আর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, বরের সামর্থ্যের বাইরে দেনমোহর ধার্য করা হয় যা কিনা বরের উপর এক প্রকার জুলুম। অথচ হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময় বিবাহ-শাদী অনেক সহজ ছিল।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেন,

হে মানব, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিতি হও। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন। [সূরা আল-হুজুরাতঃ ১৩]

মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদেরজন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন। [সূরা আন-নুরঃ৩০]

ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারাযেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদেরসৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবংতারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরেপদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাইআল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরাসফলকাম হও। [সূরা আন-নুরঃ ৩১]

আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ। [সূরাবনী-ইসরাইলঃ ৩২]

নির্লজ্জতার কাছেও যেয়ো না, প্রকাশ্য হোক কিংবা অপ্রকাশ্য [সূরা আল আন’আমঃ ১৫১]

যারা চায় যে, মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রচার ঘটুক তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আর আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না। [সূরাআন-নুরঃ ১৯]

ঈমানদার পুরুষ ও নারীদের সম্পর্কে আল্লাহ্‌ তা’আলা পবিত্র কুরআনে বলেনঃ- 

আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের সহায়ক। তারা ভাল কথার শিক্ষা দেয় এবং মন্দ থেকে বিরত রাখে। নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবন যাপন করে। এদেরই উপর আল্লাহ তা’আলা দয়া করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশীল, সুকৌশলী। [সূরা আত-তউবাঃ ৭১]

নিশ্চয় মুসলমান পুরুষ, মুসলমান নারী, ঈমানদার পুরুষ, ঈমানদার নারী, অনুগত পুরুষ, অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ, সত্যবাদী নারী, ধৈর্য্যশীল পুরুষ, ধৈর্য্যশীল নারী, বিনীত পুরুষ, বিনীত নারী, দানশীল পুরুষ, দানশীল নারী, রোযা পালণকারী পুরুষ, রোযা পালনকারী নারী, যৌনাঙ্গ হেফাযতকারী পুরুষ, , যৌনাঙ্গ হেফাযতকারী নারী, আল্লাহর অধিক যিকরকারী পুরুষ ও যিকরকারী নারী-তাদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপুরষ্কার। [সূরা আল-আহযাবঃ ৩৫]

বিবাহ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্‌তা’আলা বলেন,

তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিবাহ সম্পাদন করে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ন, তাদেরও। তারা যদি নিঃস্ব হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে সচ্ছল করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। যারা বিবাহে সামর্থ নয়, তারা যেন সংযম অবলম্বন করে যে পর্যন্ত না আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেন। [সূরা আন-নুরঃ ৩২-৩৩]

দুশ্চরিত্রা নারীকূল দুশ্চরিত্র পুরুষকুলের জন্যে এবং দুশ্চরিত্র পুরুষকুল দুশ্চরিত্রা নারীকুলের জন্যে। সচ্চরিত্রা নারীকুল সচ্চরিত্র পুরুষকুলের জন্যে এবং সচ্চরিত্র পুরুষকুল সচ্চরিত্রা নারীকুলের জন্যে। তাদের সম্পর্কে লোকে যা বলে, তার সাথে তারা সম্পর্কহীন। তাদের জন্যে আছে ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা। [সূরাআন-নুরঃ ২৬]

আর তোমরা মুশরেক নারীদেরকে বিয়ে করোনা, যতক্ষণ না তারা ঈমান গ্রহণ করে। অবশ্য মুসলমান ক্রীতদাসী মুশরেক নারী অপেক্ষা উত্তম, যদিও তাদেরকে তোমাদের কাছে ভালো লাগে। এবং তোমরা (নারীরা) কোন মুশরেকের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ো না, যে পর্যন্ত সে ঈমান না আনে। একজন মুসলমান ক্রীতদাসও একজন মুশরেকের তুলনায় অনেক ভাল, যদিও তোমরা তাদের দেখে মোহিত হও। তারা দোযখের দিকে আহ্বান করে, আর আল্লাহ নিজের হুকুমের মাধ্যমে আহ্বান করেন জান্নাত ও ক্ষমার দিকে। আর তিনি মানুষকে নিজের নির্দেশ বাতলে দেন যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে। [সূরা আল-বাকারাঃ ২২১]

আর তোমার কাছেজিজ্ঞেস করে হায়েয (ঋতু) সম্পর্কে। বলে দাও, এটা অশুচি। কাজেই তোমরা হায়েয অবস্থায়স্ত্রীগমন থেকে বিরত থাক। তখন পর্যন্ত তাদের নিকটবর্তী হবে না, যতক্ষণ না তারা পবিত্রহয়ে যায়। যখন উত্তম রূপে পরিশুদ্ধ হয়ে যাবে, তখন গমন কর তাদের কাছে, যেভাবে আল্লাহতোমাদেরকে হুকুম দিয়েছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারী এবং অপবিত্রতা থেকে যারা বেঁচেথাকে তাদেরকে পছন্দ করেন। [সূরা আল-বাকারাঃ ২২২]

তোমাদের স্ত্রীরা হলো তোমাদের জন্য শস্য ক্ষেত্র।তোমরা যেভাবে ইচ্ছা তাদেরকে ব্যবহার কর। আর নিজেদের জন্য আগামী দিনের ব্যবস্থা করএবং আল্লাহকে ভয় করতে থাক। আর নিশ্চিতভাবে জেনে রাখ যে, আল্লাহর সাথে তোমাদেরকে সাক্ষাতকরতেই হবে। আর যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে সুসংবাদ জানিয়ে দাও। [সূরা আল-বাকারাঃ ২২৩]

বিবাহ সম্পর্কিত সহীহ বুখারী শরীফের গুরুত্বপূর্ণকিছু হাদিসঃ-

সাঈদ ইবনে আবু মারয়াম (র) … সাহল (রা) থেকে বর্ণিত যে, একজন মহিলা এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে নিজেকে পেশ করলেন। এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তাকে আমার সঙ্গে শাদী বন্ধনে আবদ্ধ করিয়ে দেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার কাছে কি আছে? সে উত্তর দিল, আমার কাছে কিছুই নেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যাও, তালাশ কর, কোন কিছু পাও কিনা? যদিও একটি লোহার আংটিও (তা নিয়ে এসো)। লোকটি চলে গেল এবং ফিরে এসে বলল, একটি কিছুই পেলাম না এমনকি লোহার আংটিও না; কিন্তু আমার এ তহবন্দখানা আছে। এর অর্ধেকাংশ তার জন্য। সাহল (রা) বলেন, তার দেহে কোন চাদর ছিল না। অতএব নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার তহবন্দ দিয়ে কি করবে? যদি তুমি এটা পরিধান কর, মহিলার শরীরে কিছুই থাকবে না, আর যদি সে এটা পরিধান করে তবে তোমার শরীরে কিছুই থাকবে না। এরপর লোকটি অনেকক্ষণ বসে রইল। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে চলে যেতে দেখে ডাকলেন বা ডাকানো হল এবং বললেন, তুমি কুরআন কতটুকু জান? সে বলল, আমার অমুক অমুক সূরা মুখস্থ আছে এবং সে সূরাগুলোর উল্লেখ করল। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি যে পরিমান কুরআন জান, তার বিনিময়ে তোমাকে এর সাথে শাদী দিলাম। [সহীহ বুখারী, হাদিস নং-৪৭৪৬ ইফা]


উপরে উল্লিখিত কুরআনের আয়াত ও হাদিস থেকে আমরা যেন শিক্ষা গ্রহণ করে সেই অনুযায়ী আমরা আমাদের জীবন পরিচালনা করতে পারি, আল্লাহ্‌ তা’আলা আমাদের সেই তউফিক দান করুন। আমীন।

জাযাকাল্লাহ খায়ের।

Did you like this? Share it:

About কিতাবুল ইলম

রাসুল সাঃ বলছেন, "প্রচার কর, যদিও তা একটি মাত্র আয়াত হয়" সেই প্রচারের লক্ষে আমরা। 'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক' প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

Leave a Reply