নির্বাচিত পোস্টসমূহ
Home » ঈদে মিলাদুন্নবী (সা:) » (১ম পর্ব) প্রখ্যাত আলেমগণের দৃষ্টিতে পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নাবী (সা:)

(১ম পর্ব) প্রখ্যাত আলেমগণের দৃষ্টিতে পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নাবী (সা:)

১. প্রসিদ্ধ তাবেঈ হযরত হাসান বসরী (রঃ) বলেন
قال حسن البصري رضي الله تعالی عنه وددت لو کان لی مثل جبل احد ذھبا فانفقته علی قراءة مولد النبي صلی الله علیه وسلم
অর্থাৎ- যদি আমার উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ থাকত তাহলে আমি তা রাসূলে পাক (দঃ) এর ঈদ-ই-মিলাদুন্নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাহফিলে খরচ করতাম।
[আন নেয়মাতুল কুবরা আলাল আলাম, পৃষ্ঠা নং-১১]

২. হযরত জুনাইদ বাগদাদী (রঃ) বলেন
যে ব্যক্তি ঈদ-ই-মিলাদুন্নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ উপস্থিত হয়ে তাঁকে সম্মান প্রদর্শন করেছে, সে ঈমানের সফলতা লাভ করেছে।
[আন নেয়মাতুল কুবরা আলাল আলাম, পৃষ্ঠা নং-১১]

৩. হযরত মারুফ কারখী (রঃ) বলেন
যে ব্যক্তি ঈদ-ই-মিলাদুন্নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপলক্ষে পানাহারের আয়োজন করে মুসলিমদের ভাইদের একত্রিত করে, আলোকসজ্জা করে, নতুন পোষাক পরিধান করে এবং খুশবো, আতোর, গোলাপ ও লোবান প্রয়োগে নিজেকে সুগন্ধিযুক্ত করে; রোজ কিয়ামতে প্রতম শ্রেণীর নবীদের সাথে তার হাশর হবে এবং ইল্লীঈনের সর্বোচ্চ স্থানে সে অবস্থান করবে।
[আন নেয়মাতুল কুবরা আলাল আলাম, পৃষ্ঠা নং-১১]

৪. শাফেঈ মাযহাবের প্রবর্তক ইমাম শাফেঈ (রঃ) বলেন
যদি কোন ব্যক্তি ঈদ-ই-মিলাদুন্নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপলক্ষে মুসলিম ভাইদেরকে খাবার তৈরী করে মজলিসে আপ্যায়ন করে ও ইবাদাত সম্পন্ন করে, রোজ কিয়ামতে সিদ্দীকিন, শাহাদা ও সালেহীনদের সাথে তার হাশর হবে এবং জান্নাতুন নাঈমে সে অবস্থান করবে।
[আন নেয়মাতুল কুবরা আলাল আলাম, পৃষ্ঠা নং-১৩]

৫. ৯ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতি (রঃ) বলেন
أن أصل عمل المولد الذي هو اجتماع الناس وقراءة ما تيسر من القرآن ورواية الأخبار الواردة في مبدأ أمر النبي صلى الله عليه وسلم وما وقع في مولده من الآيات ثم يمد لهم سماط يأكلونه وينصرفون من غير زيادة على ذلك هو من البدع الحسنة التي يثاب عليها صاحبها لما فيه من تعظيم قدر النبي صلى الله عليه وسلم وإظهار الفرح والاستبشار بمولده الشريف
“মীলাদুন্নবী (ﷺ)উদযাপন যা মূলতঃ মানুষদের সমবেত করা, কুরআনের অংশ-বিশেষ তেলাওয়াত, মহানবী (ﷺ)-এর ধরাধামে শুভাগমন (বেলাদত) সংক্রান্ত ঘটনা ও লক্ষ্মণগুলোর বর্ণনা পেশ, অতঃপর তবাররুক (খাবার) বিতরণ এবং সবশেষে সমাবেশ ত্যাগ, তা উত্তম বেদআত (উদ্ভাবন); আর যে ব্যক্তি এর অনুশীলন করেন তিনি সওয়াব অর্জন করেন, কেননা এতে জড়িত রয়েছে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর মহান মর্যাদার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রদর্শন এবং তাঁর সম্মানিত বেলাদতের প্রতি খুশি প্রকাশ।”
[ইমাম সৈয়ুতী কৃত ‘আল-হাওয়ী লিল্ ফাতাওয়ী’, ১ম খণ্ড, ২৯২ পৃষ্ঠা, মাকতাবা আল-আসরিয়া, বৈরুত, লেবানন হতে প্রকাশিত] দেখুন আরবী বই এর স্ক্যান কপি
http://www.ahlus-sunna.com/index.php…

৬. তিনি তার স্ব-রচিত “আল উয়াছায়েল ফী শরহিশ শামাইল” গ্রন্থে উল্লেখ আরও করেন, “যে গৃহে বা মসজিদে কিংবা মহল্লায় মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষ্যে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। তখন অবশ্যই সে গৃহ বা মসজিদ বা মহল্লা অসংখ্য ফেরেশতা দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে এবং উক্ত স্থান সমূহে যারা অবস্থান করে তাদের জন্য তারা সালাত পাঠ করে। (অর্থাৎ তাদের গুণাহর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে) এবং আল্লাহ তায়ালা তাদের সবাইকে সাধারণভাবে রহমত ও সন্তুষ্টি দ্বারা ভূষিত করেন। অতঃপর নূরের মালা পরিহিত ফেরেশতাকুল বিশেষতঃ হযরত জিব্রাঈল, মীকাঈল, ঈস্রাফীল ও আজরাঈল আলাইহিস সালাম মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষ্যে মাহফিল আয়োজনকারীর গুণাহ মাফের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে থাকেন”।

তিনি আরো বলেন, “যে মুসলমানের গৃহে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ পাঠ করা হয়, সে গৃহ ও গৃহে বসবাসকারী ব্যক্তি দুর্ভিক্ষ, মহামারী, অগ্নি, পানি, পরনিন্দা, কুদৃষ্টি ও চুরি ইত্যাদির আক্রমণ থেকে মুক্ত থাকবে। সে ঘরে যার মৃত্যু হবে সে মৃত ব্যক্তি কবরে মুনকার নকীরের প্রশ্নের উত্তর অতি সহজে দিতে পারবে। যে ব্যক্তি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ কে সম্মান করতে চায়, তার জন্য ইহাই যথেষ্ট। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তির নিকট নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদের কোন মর্যাদা নেই, তার অন্তর এত নিকৃষ্ট হয়ে পড়বে যে, তার সামনে হুযুরপুর নূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিশ্বজোড়া প্রশংসাগীতি উচ্চারিত হলেও তার অন্তরে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্য বিন্দুমাত্র মুহাব্বতের উদ্রেক হবে না”।
[আন নেয়মাতুল কুবরা আলাল আলাম, পৃষ্ঠা নং- ১৩ ও ১৪]

৭. ইমাম ইবন কাসীর (রঃ) বলেন
ইবনে কাসীর, যাকে সালাফী/ওহাবীরা তাফসীর ও ইতিহাস শাস্ত্রে সবচেয়ে বেশি শ্রদ্ধা করে থাকে, তিনি সর্বজন শ্রদ্ধেয় ইসলামের মুজাহিদ সুলতান গাযী সালাহউদ্দীন আইয়ুবীর ভগ্নিপতি শাহ মালিক আল-মুযাফফর সম্পর্কে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। অথচ সালাফীরাই ইবনে কাসীরের কথাকে বিকৃত করে এই মর্মে মিথ্যে ছড়িয়েছে যে মুযাফফর শাহ একজন ফাসেক, নিষ্ঠুর ও বেদআতী শাসক ছিলেন (নাউযু বিল্লাহ)। প্রকৃতপক্ষে ইবনে কাসীর লিখেন:
أحد الاجواد والسادات الكبراء والملوك الامجاد له آثار حسنة وقد عمر الجامع المظفري بسفح قاسيون وكان قدهم بسياقه الماء إليه من ماء بذيرة فمنعه المعظم من ذلك واعتل بأنه قد يمر على مقابر المسلمين بالسفوح وكان يعمل المولد الشريف في ربيع الاول ويحتفل به احتفالا هائلا وكان مع ذلك شهما شجاعا فاتكا بطلا عاقلا عالما عادلا رحمه الله وأكرم مثواه وقد صنف الشيخ أبو الخطاب ابن دحية له مجلدا في المولد النبوي سماه التنوير في مولد البشير النذير فأجازه على ذلك بألف دينار وقد طالت مدته في الملك في زمان الدولة الصلاحية وقد كان محاصر عكا وإلى هذه السنة محمودالسيرة والسريرة قال السبط حكى بعض من حضر سماط المظفر في بعض الموالد كان يمد في ذلك السماط خمسة آلاف راس مشوى وعشرة آلاف دجاجة ومائة ألف زبدية وثلاثين ألف صحن حلوى
(মুযাফফর শাহ) ছিলেন একজন উদার/সহৃদয় ও প্রতাপশালী এবং মহিমান্বিত শাসক, যাঁর সকল কাজ ছিল অতি উত্তম। তিনি কাসিইউন-এর কাছে জামেয়া আল-মুযাফফরী নির্মাণ করেন…..(প্রতি) রবিউল আউয়াল মাসে তিনি জাঁকজমকের সাথে মীলাদ শরীফ (মীলাদুন্নবী) উদযাপন করতেন। উপরন্তু, তিনি ছিলেন দয়ালু, সাহসী, জ্ঞানী, বিদ্বান ও ন্যায়পরায়ণ শাসক – রাহিমুহুল্লাহ ওয়া একরাম – শায়খ আবুল খাত্তাব (রহ:) সুলতানের জন্যে মওলিদুন্ নববী সম্পর্কে একখানি বই লিখেন এবং নাম দেন ‘আত্ তানভির ফী মওলিদ আল-বাশির আন্ নাযীর’। এ কাজের পুরস্কারস্বরূপ সুলতান তাঁকে ১০০০ দিনার দান করেন। সালাহিয়া আমল পর্যন্ত তাঁর শাসন স্থায়ী হয় এবং তিনি ’আকা’ জয় করেন। তিনি সবার শ্রদ্ধার পাত্র থেকে যান।
আস্ সাবত্ এক ব্যক্তির কথা উদ্ধৃত করেন যিনি সুলতানের আয়োজিত মওলিদ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন; ওই ব্যক্তি বলেন: ‘অনুষ্ঠানে সুলতান ভালভাবে রান্নাকৃত ৫০০০ ছাগল, ১০,০০০ মোরগ, ১ লক্ষ বৌল-ভর্তি দুধ এবং ৩০,০০০ ট্রে মিষ্টির আয়োজন করতেন’।”
[’তারিখে ইবনে কাসীর’, ‘আল-বেদায়াহ ওয়ান্ নেহায়া’ ১৩তম খণ্ড, ১৭৪ পৃষ্ঠা] স্ক্যান কপিঃ
http://www.ahlus-sunna.com/index.php…

[এটি ধারাবাহিক পোষ্ট। অযাচিত বা অপ্রাসঙ্গিক কোনো মন্তব্য করার আগে সব পোষ্ট পড়ে নিবেন। ইনশাল্লাহ কোনো না কোনো পোষ্টে উত্তর পেয়ে যাবেন। অযাচিত বা অপ্রাসঙ্গিক মন্তব্য এবং কপি-পেষ্ট ডিলিট করা হতে পারে।]
Did you like this? Share it:

About কিতাবুল ইলম

রাসুল সাঃ বলছেন, "প্রচার কর, যদিও তা একটি মাত্র আয়াত হয়" সেই প্রচারের লক্ষে আমরা। 'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক' প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

Leave a Reply