নির্বাচিত পোস্টসমূহ
Home » ইসলামী আকিদা » ইমাম হোসাইন (রা:) হত্যার পিছনে ইয়াজিদ দায়ী পর্ব- ১

ইমাম হোসাইন (রা:) হত্যার পিছনে ইয়াজিদ দায়ী পর্ব- ১

চরিত্রগুলিঃ
মুসলিম বিন আকিলঃ ইমাম হুসাইনের পাঠানো প্রতিনিধি যিনি ইমাম হুসাইনের আগে কুফায় গিয়ে ছিলেন।
নুমান বিন আল-বসীরঃ কুফায় ইয়াজিদের গভর্নর, মুসলিম বিন আকিলকে প্রতিরোধ করতে ব্যার্থ হওয়ায় তাকে পদ থেকে বাদ দেওয়া হয়।
ইবনে যিয়াদঃ ইয়াযিদ কর্তৃক নতুন নিয়োগকৃত কুফার গভর্নর। যিনি মুসলিম বিন আকিলকে হত্যার নির্দেশ দেন।

কুফা নগরীর পথে ইমাম হুসাইনঃ
ইয়াজিদের ক্ষমতা আরোহনের পর সমস্যাবলীর কারণে ইমাম হুসাঈন নবীর শহরে রক্তপাতের আশংকায় মদীনা ত্যাগ করলেন। তিনি মদিনা ত্যাগ করার সময় পাঠ করিলেন “হে আমার পালনকর্তা, আমাকে জালেম সম্প্রদায়ের কবল থেকে রক্ষা কর”(আল কোরান, ২৮ঃ২১)। মক্কায় পৌছানোর পর পর তিনি উচ্চারণ করিলেন, “যখন তিনি মাদইয়ান অভিমুখে রওয়ানা হলেন তখন বললেন, আশা করা যায় আমার পালনকর্তা আমাকে সরল পথ দেখাবেন”(আল কোরান ২৮ঃ২২)-[১:তাবারী]

কুফা নগরীর মানুষজন যখন এই খবর জানতে পারলো যে ইমাম হুসাঈন ইয়াজিদের নিকট বায়াত হতে অপারগতা জানিয়েছেন, তারা গোপন বৈঠকে মিলিত হল। তখনকার ইরাকবাসী নবী পরিবারের সমর্থক বলে গন্য হত। এমন কি তারা হযরত মুয়াবিয়া রাঃ এর সময়কালেও ইমাম হুসাইনকে অনুরোধ করেছিল তাদের কাছে যাওয়ার, যে অনুরোধ ইমাম হুসাইন গ্রহন করেননি।–[২, তারিখ আল খুলায়ফা, সুয়তি] যাইহোক, তারা ইমাম হুসাইনকে তাদের নিকট আসার অনুরোধ জানিয়ে পত্র লিখল এবং দূতও পাঠালো।–[৩, তারিখ আল খুলায়ফা, সুয়তি] তারা চিঠিতে লিখল, “আমরা নিজেদেরকে আপনার জন্য রেখেছি, আমরা গভর্নরের পিছনে জুম্মার নামাজে অংশগ্রহন করছি না, আমাদের নিকট চলে আসুন”-[৪, তাবারী]

তারা আরেকটি চিঠিতে এ অনুরোধ জানালো, “আমাদের কোন ইমাম নেই, অতএব চলে আসুন, আল্লাহ পাক যেন আপনার মাধ্যমে আমাদের কে সত্য পথে একতৃত্র করেন। নুমান ইবনে আল বাসির গভর্নরের পদে আছেন, আমরা তার সাথে জুম্মার নামাজে অংশ গ্রহন করছি না। না আমরা ঈদের নামাজে তার সাথে থাকছি, যদি আমরা জানতে পারি, আপনি একমত হয়েছেন যে আমাদের কাছে আসবেন, তাহলে আমরা তাকে সিরিয়ার দিকে ফেরত পাঠাবো, ইনশা-আল্লাহ। আল্লাহ পাক আপনার প্রতি শান্তি ও আশির্বাদ বর্ষন করুন।”-[৫, তাবারী]

৬০ হিজরি/৬৮০ খ্রিস্টাব্দে প্রায় ৫৩টি চিঠি ইমাম হুসাইনের কাছে আসে ইরাকে যাবার অনুরোধ জানিয়ে।–[৬, তাবারী] ইমাম হুসাঈন এই চিঠি গুলিকে খুব গুরুত্ব সহকারে নিলেন এবং পরিবারবর্গ ও বাকিদের পড়ামর্শ করলেন। তিনি কুফার পরিস্থিতি জানার জন্য মুসলিম বিন আকিলকে কুফার উদ্দোশ্যে পাঠালেন। “কুফাও যাও, এবং তদন্ত করে দেখ তারা আমার নিকট যা লিখেছে। যদি সত্য হয়, তাহলে আমরা তাদের নিকট যাব”-[৭, তাবারী]

তিনি মুসলিম বিন আকিল কে একটি চিঠিও দিয়ে পাঠালেন, “আমি তোমাদের কাছে আমার ভাই মুসলিম বিন আকিলকে পাঠালাম, সে আমার কাজিন ভাই এবং আমার পরিবারের বিশ্বস্থ প্রতিনিধি। আমি তাকে নির্দেশ দিয়েছি, তোমাদের অবস্থা, আচরণ এবং মতামত সম্পর্কে আমার কাছে লিখতে। যদি সে লিখে যে তোমাদের নেতারা এবং তোমাদের মধ্যে বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী ব্যাক্তিরা একই ভাবে একত্রিত যেভাবে আমার কাছে আসা দূত বর্ননা করেছিল এবং আমার কাছে লিখিত পত্রগুলিতে বর্ননা করা হয়েছিল, তাহলে আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তোমাদের কাছে চলে আসব, আল্লাহ পাকের ইচ্ছায়, যদি আমার জীবন দ্বারা যদি একজন ইমাম হয় যে কিতাবের আলোকে কাজ করে, যে ন্যায়বিচার ধরে থাকে, সেই ব্যাক্তি যে সত্য স্বীকার করে, এবং নিজেকে আল্লাহ পাকের দিকে ধাবিত করে। তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক”-[৮, তাবারী]

মুসলিম বিন আকিল যখন তার দুই পুত্র সহ কুফা নগরিতে আসেন, তখন বহু সংখ্যক মানুষ জড় হয়। তাকে সেখানে স্বাগতম জানানো হয়, স্থানীয় লোকজন ইমাম হুসাইনের প্রতি তাদের সমর্থনের পুনর্ব্যাক্ত করে। প্রায় ২০ হাজারের মত মানুষ তার নিকট বায়াত হয়।–[৯, তাবারী]

কিছুদিনের মধ্যেই প্রায় ৪০ হাজার মানুষ মুসলিম বিন আকিলের হাত ধরে বায়াত গ্রহন করে।[১০, ইবনে কাথির] এজন্য, মুসলিম বিন আকিল ইমাম হোসাইনকে পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত করে অতীসত্তর কুফা আসার অনুরোধ করে পত্র লিখলেন।

ইমাম হুসাইনের কিছু নিকট ব্যাক্তিত্ব তাকে কুফা যেতে বারন করলেন। তারা চিন্তিত ছিলেন কুফা বাসীর অবিশ্বস্থতার পড়িচিতির কারণে। হয়ত ইমাম হুসাইন এমন কিছু জানতেন যা তারা জানতেন না। আব্দুল্লাহ ইবনে জাফর, ইমাম হুসাইনকে কুফা যাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করে চিঠি লিখে ছিলেন। জবাবে ইমাম হুসাইন উত্তর দিলেন, “আমি একটি সপ্ন দেখেছি, আমি রাসূল সাঃকে দেখেছি। তিনি আমাকে কিছু করতে হুকুম করেছেন, যা আমি পালন করব। এবং আমি কাউকে বলব না সেটা কি যে পর্যন্ত না আমি সম্পূর্ন করতে পারি”।–[১১, তারিখ আল ইসলাম]

“ইসলাম জিন্দা হতা হ্যায় হার কারবালা কী বাদ”-আল্লামা ইকবাল

ইয়াজিদ কুফার পরিস্থিতি জানার সাথে সাথেই গভর্নর নুমান ইন আল বাসিরের উপর ক্ষিপ্ত হলেন, যেহেতু নুমান বিন বাসির পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যার্থ হয়েছিলেন। তার জায়গায় বিভিন্ন মানুষের পড়ামর্শে কঠোর নির্মম উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদকে গভর্নর নিয়োগ দিলেন।–[১২, ইবনে কাথির]

ইবনে যিয়াদকে চিঠিতে ইয়াজিদ লিখলেন, ‘আমার কুফার অনুসারীরা আমাকে জানিয়েছে যে মুসলিম বিন আকিল কুফায় মানুষ জড় করেছে মুসলিমদের মধ্যে বিদ্রোহ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য। অতএব, যখন তুমি আমার এই চিঠি পড়বে, তখনই কুফায় যাবে এবং মুসলিম বিন আকিলকে তন্ন তন্ন করে খুজবে যে পর্যন্তনা তাকে পাও। তারপর তাকে চেইন দিয়ে বাধবে এবং মেরে ফেলবে অথবা বহিষ্কার করবে। তোমার উপর শান্তি বর্ষিত হোক’-[১৩, তাবারি]

দুঃখের শুরুঃ
ইমাম হুসাইন পরিবেশ অনুকূলে জেনে ইমাম হুসাইন কুফা শহরের উদ্দোশ্যে যাত্রা করলেন ৮ই জুল-হাজ, ৬০ হিজরিতে। ঠিক একই সময়ে কুফার পরিস্থিতি খারাপ হতে লাগল। ইবনে যিয়াদের প্ররোচনা, ঘুষ এবং বল প্রয়োগের কারণে কুফা বাসী মুসলিম বিন আকিলের পক্ষ ত্যাগ করল, এবং ইয়াযিদের আনগত্য মেনে নিল।-[১৪, তাবারী]

আস্তে আস্তে কুফাবাসীরা মুসলিম বিন আকিলকে ফেলে ইবনে যিয়াদের পক্ষ অবলম্বন করতে লাগল। মুসলিম বিন আকিল তার সমর্থকদের নিয়ে যারা প্রায় চার হাজারের মত ছিল ইবনে যিয়াদের বিপক্ষে অবস্থান নিলেন। তার সমর্থকরা পালাতে শুরু করল, দুপুরের মধ্যে তাদের সংখ্যা ৫০০তে গিয়ে পৌছালো। রাত আসার সাথে সাথেই ঐ ৫০০ জনও চলে গেল।-[১৫,তাবারী]

অন্য আরেকটি বরাত থেকে জানা যায়, তিনি যখন সন্ধ্যার নামাজ পড়েন, তার সাথে তিরিশ জনের মত মানুষ ছিল, নামাজের পড়ে তিনি যখন খিন্দার গেইটের দিকে গেলেন তার সাথে দশ জনের মত ছিল। তিনি যখন গেইট পার হলেন, তখন তিনি একাই ছিলেন।–[১৬, তাবারী, ইবনে কাথির]

মুসলিম বিন আকিল একটা বাড়ীতে আশ্রয় নিলেন, কিন্তু অবিশ্বাসী কুফাবাসী ইবনে যিয়াদকে বলে দিল তিনি কোথায় আছেন। বাড়িটি খুব তাড়াতাড়ি ঘেরাও করা হল। এবং মুসলিম বিন আকিলকে বন্দী করে ইবনে যিয়াদের নিকট আনা হল। ইবনে যিয়াদ হুকুম করল, তাকে মহলের উপরে নিয়ে হত্যা করতে। তারপর, তার দেহ নিচের মানুষের উপর ফেলে দিতে।–[১৭, তাবারী]

মুসলিম বিন আকিলের মস্তকটি ইবনে যিয়াদ ইয়াজিদকে পাঠালো, ইয়াজিদ উত্তরে পাঠালো, “তুমি এর থেকে বেশী যাওনি যতটুকু আমি চেয়েছি। তুমি বিবেচনার সাহিত কাজ করেছে……আমাদের সন্তুষ্ট করেছ, এবং কাজের জন্যে যতেষ্ট”-[১৮, ইবনে কাথির]

Did you like this? Share it:

About কিতাবুল ইলম

রাসুল সাঃ বলছেন, "প্রচার কর, যদিও তা একটি মাত্র আয়াত হয়" সেই প্রচারের লক্ষে আমরা। 'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক' প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

Leave a Reply