পবিত্র মিরাজের সত্যতা এবং ঘটনা সম্পর্কে অনেকেই ভিন্নমত পোষণ করেন। কিন্তু পবিত্র কোরআন-হাদিসে এর সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। এমন সত্য ঘটনাকে উপলব্ধি বা হৃদয়ঙ্গম করা প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের কর্তব্য।
হজরত আবু বকর (রা.) সর্বপ্রথম শবে মিরাজের বাস্তব ঘটনার সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। আর এ জন্য তিনি পেয়েছিলেন ‘সিদ্দিকে আকবর’ খেতাব অর্থাৎ মহাসত্যবাদী। কাজেই আমরা হজরত নবী করিম (সা.)-এর মিরাজ সংঘটিত ঘটনাকে আমাদেরও উচিত ‘সিদ্দিকে আকবরের ন্যায় মিরাজের ঘটনাবলি নিঃসন্দেহে বিশ্বাস স্থাপন করে নিজেদের সাদেকিনদের (সত্যবাদীদের) অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া।
বর্তমান বিশ্বে বৈজ্ঞানিক উৎকর্ষের সঙ্গে শবে মিরাজের ঘটনার তুলনামূলক যুক্তি প্রদর্শনে না গিয়ে পবিত্র কোরআন হাদিসসহ নির্ভরযোগ্য তথ্যমূলক গ্রন্থগুলোর আলোকে এখানে আমি শবে মিরাজের সারসংক্ষেপ তুলে ধরছি।
রজব চাঁদের ২৬ তারিখ দিবাগত রাত। মহানবী হজরত রাসুলে মকবুল (সা.) এশার নামাজ সম্পন্ন করে উম্মেহানির ঘরে ঘুমিয়েছিলেন। সে সময় হজরত জিব্রাইল (আ.) সেখানে উপস্থিত হয়ে শুভবার্তা জানান, হে মহান আল্লাহর পেয়ারা নবী, আপনি জাগ্রত হোন এবং উঠে পড়ুন। আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে আপনার জন্য দ্রুতগামী বাহন বিদ্যুতের চেয়ে অধিক শক্তিসম্পন্ন বোরাক নিয়ে এসেছি। আপনার অভ্যর্থনার জন্য সব ফেরেশতা ও নবী-পয়গম্বর অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। হজরত জিব্রাইল (আ.)-এর এমন সুমধুর ডাক শুনে মহানবী (সা.) জেগে ওঠেন এবং হাওজে কাওসারের পানি দিয়ে অজু করে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করে আল্লাহপাকের নির্দেশ মোতাবেক পবিত্র বোরাকে আরোহণ করেন এবং হাজার হাজার স্বর্গীয় ফেরেশতার পরিবেষ্টনে ‘বোরাক’ ঊর্ধ্বালোকে ছুটে চলল। এবার আল্লাহর পেয়ারা নবী মুহাম্মদ (সা.) বোরাকে উঠেই কেঁদে ওঠেন এবং দুহাত তুলে ফরিয়াদ করেন, হে আল্লাহ দয়াময়, আজ আপনি আমাকে পরম অভ্যর্থনায় বোরাক করে আপনার দরবারে নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু রোজ হাশরে আমার প্রিয় উম্মতের অবস্থা কী হবে? ইরশাদ হলো, হে নবী উম্মতে মুহাম্মদী রোজ হাশরে এমনিভাবে সম্মান পাবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের বাণী শুনে হজরত রাসুল করিম (সা.) শুকরিয়া জানালেন এবং বায়তুল মোকাদ্দাস এসে পূর্ববর্তী নবী রাসুলদের উপস্থিতিতে দুই রাকাত নামাজের ইমামতি করেন।
এরপর আল্লাহর পেয়ারা হাবীব হজরত মুহাম্মদ (সা.) বোরাকে আরোহণ করে বিশ্বস্রষ্টার নভোমণ্ডলের অপরূপ দৃশ্য দেখে বিমোহিত হন।
প্রথম আসমানে হজরত আদম (আ.)-এর সাক্ষাৎ হয় এবং হজরত আদম (আ.) আল্লাহর প্রিয় বন্ধু মুহাম্মদ (সা.)-কে সাদর অভ্যর্থনা জানান। এ সময় গোটা নভোমণ্ডল থেকে ধ্বনি ওঠে মারহাবা, মারহাবা। এরপর তিনি পর্যায়ক্রমে,,
দ্বিতীয় আসমানে হজরত ঈসা (আ.) ও হজরত ইয়াহিয়া,
তৃতীয় আসমানে হজরত ইউসুফ (আ.),
চতুর্থ আসমানে হজরত ইদ্রিস (আ.),
পঞ্চম আসমানে হজরত হারুন (আ.),
ষষ্ঠ আসমানে হজরত মুসা (আ.) এবং সপ্তম আসমানে হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সাক্ষাৎ ঘটে।
পরে বায়তুল মা’মুর নামক আসমানি পবিত্র কাবাগৃহে ফেরেশতাদের নিয়ে আবার দুই রাকাত নামাজ আদায় করে ‘সিদরাতুল মুনতাহা’ নামক স্থানে গিয়ে অবতরণ করেন। এখানে এসেই ‘বোরাক’ থেমে গিয়েছিল। সিদরাতুল মুনতাহার অভূতপূর্ব স্বর্গীয় আভা দেখে তিনি বিমোহিত হন। হজরত জিব্রাইল (আ.) জানান, হে আল্লাহর নবী এই পর্যন্ত আমার সীমানা। এর পরে আর আমার অগ্রসর হওয়ার সাধ্য নেই। অতঃপর এখান থেকে মহানবী হজরত রাসুলে করিম (সা.)-কে ‘রফ রফ’ নামক আরেকটি কুদরতি বাহনে আল্লাহ পাকের আরশে মোয়াল্লায় নিয়ে যাওয়া হয়।