নির্বাচিত পোস্টসমূহ
Home » পুণ্যবান স্ত্রী » খাদিজা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’লা আনহুর সাথে রাসূলুল্লাহর ﷺ নিকাহ মোবারাক।

খাদিজা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’লা আনহুর সাথে রাসূলুল্লাহর ﷺ নিকাহ মোবারাক।

খাদিজা বিনতু খুয়াইলিদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’লা আনহু ছিলেন তৎকালীন আরবের একজন সম্ভ্রান্ত ও ধনাঢ্য ব্যবসায়ী মহিলা। তিনি লোকজনকে নির্দিষ্ট বেতনে ও লভ্যাংশের ভিত্তিতে ব্যবসায়ে নিয়োগ করতেন। ব্যবসায়ী গোত্র হিসেবে কুরাইশদের নাম-ডাক ছিল। রসূলুল্লাহ ﷺ সত্যবাদিতা, বিশ্বস্ততা ও চারিত্রিক মহত্বের কথা জানতে পেরে তিনি তাঁর কাছে লোক পাঠিয়ে তার পণ্যসামগ্রী নিয়ে সিরিয়া যাওয়ার প্রস্তাব দিয়ে বললেন যে, এজন্য তিনি যা দিয়ে থাকেন তার চেয়ে উত্তম সম্মানী তাঁকে দেবেন। মাইসারাহ নামক এক কিশোরকেও তার সাহায্যের জন্য সঙ্গে দিতে চাইলেন। রসূলুল্লাহ ﷺ এই প্রস্তাব গ্রহণ করলেন এবং খাদিজার পণ্য সামগ্রী ও দাস মাইসারাকে সাথে নিয়ে সিরিয়ায় রওনা হলেন। অনতি বিলম্বে তিনি সিরিয়ায় গিয়ে পৌঁছলেন।

সিরিয়ায় পৌঁছে তিনি জনৈক ধর্মযাজকের গীর্জার নিকটবর্তী এক গাছের নীচে বিশ্রাম করলেন। ধর্মযাজক মাইসারাকে জিজ্ঞেস করলেন, “গাছটির নিচে যিনি বিশ্রাম নিচ্ছেন তিনি কে?” মাইসারাহ বললেন, “তিনি হারামের অধিবাসী জনৈক কুরাইশ বংশীয় ব্যক্তি।” ধর্মযাজক বললেন, “এই গাছের নিচে নবী করিম ﷺ ছাড়া আর কেউ কখনো বিশ্রাম নেয়নি!”

রসূলুল্লাহ ﷺ তার আনীত পণ্য বিক্রি করে দিলেন এবং নতুন কিছু জিনিস ক্রয় করলেন। অতঃপর তিনি মক্কা অভিমুখে রওনা হলেন। পথে যেখানেই দুপুর হয় এবং প্রচন্ড রৌদ্র ওঠে, মাইসারাহ দেখতে পায় যে, দু’জন ফিরিশতা মুহাম্মাদ ﷺ কে ছায়া দিয়ে রৌদ্র থেকে রক্ষা করছে এবং তিনি উটের পিঠে সওয়ার হয়ে এগিয়ে চলেছেন। মক্কায় পৌঁছে তিনি খাদিজাকে রাদ্বিয়াল্লাহু তা’লা আনহুকে তার ক্রয় করা পণ্যদ্রব্য বুঝিয়ে দিলেন। খাদিজা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’লা আনহু ঐ মাল বিক্রি করে প্রায় দ্বিগুণ মুনাফা লাভ করলেন।

খাদিজা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’লা আনহুর সাথে রাসূলুল্লাহর ﷺ নিকাহ মোবারাক।
মাইসারাহ খাদিজা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’লা আনহু কে যাজকের বক্তব্য ও নবী করিম ﷺ দুই ফেরেশতার ছায়াদানের বিষয় অবহিত করলেন। খাদীজা ছিলেন দৃঢ় ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন বুদ্ধিমতি ও সম্ভ্রান্ত মহিলা। রসূলুল্লাহ ﷺ মহত্ব ও সততার সাথে পরিচিত হওয়া তার জন্য একটা অতিরিক্ত সৌভাগ্যরূপে বিবেচিত হল, যা নিছক আল্লাহর ইচ্ছাক্রমেই তিনি লাভ করলেন। মাইসারাহ কাছে উক্ত অলৌকিক ঘটনার কথা শুনে খাদিজা লোক পাঠিয়ে তাকে বললেন, “ভাই, আপনাদের গোত্রের মধ্যে আপনার যে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান, যে আত্মীয়তার বন্ধন এবং সর্বোপরি আপনার বিশ্বস্ততা, চরিত্রমাধুর্য ও সত্যবাদিতার সুনাম রয়েছে, তাতে আমি মুগ্ধ ও অভিভূত।” এই কথা বলে খাদিজা তাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেন। কুরাইশদের মধ্যে খাদিজা ছিলেন সর্বাপেক্ষা অভিজাত বংশীয়া, সর্বোচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন সম্ভ্রান্ত এবং অতিশয় ধনাঢ্য মহিলা। এ কারণে সম্ভব হলে তার গোত্রের সকলেই তাকে বিয়ে করার অভিলাষ পোষণ করতো।

রাসূলুল্লাহ ﷺ খাদিজার রাদ্বিয়াল্লাহু তা’লা আনহুর এ প্রস্তাব চাচাদেরকে জানালেন। চাচা হামযা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’লা আনহু খাদিজা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’লা আনহুর পিতা খুয়াইলিদ ইবনে আসাদের (ইবনে আবদুল উযযা ইবনে কুসাই ইবনে কিলাব ইবনে মুররাহ ইবনে কা’ব ইবনে লুয়াই) সাথে দেখা করে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিলেন এবং বিয়ে সম্পন্ন হলো। রসূলুল্লাহ ﷺ মোহরানা হিসেবে খাদিজাকে ২০ টি উট দিয়েছিলেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ খাদিজার রাদ্বিয়াল্লাহু তা’লা আনহুর জীবদ্দশায় তিনি আর কোন বিয়ে করেননি।

খাদিজার রাদ্বিয়াল্লাহু তা’লা আনহুর গর্ভে রসূলুল্লাহ ﷺ উনার একমাত্র সাহেব জাদা ইবরাহিম আলাইহিস সালাল তিনি ছাড়া সব সন্তান জন্মগ্রহণ করেন। খাদিজার রাদ্বিয়াল্লাহু তা’লা আনহুর গর্ভ থেকে রসূলুল্লাহ ﷺ উনার যে কয়জন সন্তান জন্মেছিলেন তারা হলেনঃ কাসিম, তাহির তাইয়েব, যয়নাব, উম্মে কুলসুম ও ফাতিমা। কাসিমের নামানুসারে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবুল কাসিম নামেও খ্যাত হন। কাসিম ও তাহির জাহেলিয়াতের যুগেই মারা যান। কিন্তু মেয়েরা সবাই ইসলামের আবির্ভাব প্রত্যক্ষ করেন এবং ইসলাম গ্রহণ করে পিতার সাথে হিজরাত করেন।

বর্ণনা থেকে বুঝা যায়, তাহির ও তাইয়েব দুই ব্যক্তি। কিন্ত প্রকৃত ব্যাপার হলো এ দুটোই আবদুল্লাহর উপনাম। তাকে এই দুই নামেই ডাকা হতো। সূত্রঃ সাইয়িদুল মুরসালীন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রাচীনতম জীবনীগ্রন্থ ‘সীরাতে ইবনে হিশাম’ থেকে হুবহু উদ্ধৃত।

Did you like this? Share it:

About কিতাবুল ইলম

রাসুল সাঃ বলছেন, "প্রচার কর, যদিও তা একটি মাত্র আয়াত হয়" সেই প্রচারের লক্ষে আমরা। 'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক' প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

Leave a Reply